প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:১৮
ভোলার তজুমদ্দিনে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবকের মৃত্যু
গণপিটুনিতে আতঙ্ক
![গণপিটুনিতে আতঙ্ক](/assets/news_photos/2025/02/13/image-58894-1739445773bdjournal.jpg)
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়া বাড়িতে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নয়ন (৩০) ও আমির হোসেন (২৭)।
|আরো খবর
তজুমদ্দিন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস জানান, গভীর রাতে ওই দুই যুবক স্থানীয় এক বাসিন্দার গোয়ালঘর থেকে গরু চুরির চেষ্টা করলে বাড়ির মালিক বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার করেন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাদের আটক করে বেধড়ক মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই নয়ন ও আমির হোসেনের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ভোর পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের লাশ বর্তমানে মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, নিহতরা পেশাদার গরু চোর এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি অন্যান্য গণপিটুনির ঘটনা
সম্প্রতি দেশে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নকলায় গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মোসলেম উদ্দিন (৪৫) নামে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। তারা একটি পিকআপ ভ্যানে করে এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন, যা স্থানীয়দের সন্দেহের কারণ হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এছাড়া, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে বগুড়ার শেরপুরে গরু চুরি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে আছির আলী প্রামাণিক (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থা রেখে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করা উচিত। গণপিটুনি সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় এবং নিরপরাধ ব্যক্তিরাও এর শিকার হতে পারেন।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বক্তব্য
পুলিশ প্রশাসন সাধারণ জনগণকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেখলে স্থানীয় প্রশাসন বা থানায় খবর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন
গণপিটুনি রোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, ইমাম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ভূমিকা রাখা উচিত। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা রেখে সমস্যা সমাধান করা উচিত।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করে জনগণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পর্ক উন্নত করা যেতে পারে। এছাড়া, সন্দেহভাজন অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব।
সর্বশেষ তথ্য
নিহত নয়ন ও আমির হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে।
গণপিটুনি কোনো সমস্যার সমাধান নয়। এটি বরং সমাজে বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করা উচিত। সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ