মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:০২

সাগর-রুনি হত্যা: তদন্তে অচলাবস্থা, নতুন মোড় না এলে রহস্য অমীমাংসিতই থাকবে

১৩ বছরের তদন্তেও বিচার অনিশ্চিত, অজ্ঞাত দুই ডিএনএ-ই শেষ ভরসা

প্রতিবেদন :মো জাকির হোসেন
১৩ বছরের তদন্তেও বিচার অনিশ্চিত, অজ্ঞাত দুই ডিএনএ-ই শেষ ভরসা
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির(ছবি :সংগৃহীত)

বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের ইতিহাসে অন্যতম চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির নৃশংস মৃত্যু। ১৩ বছর পার হলেও তাদের হত্যার মোটিভ, খুনির পরিচয় এবং নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য উদঘাটন হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে টাস্কফোর্স নতুনভাবে তদন্ত শুরু করলেও অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির ডিএনএ শনাক্ত করতে না পারায় তদন্ত থমকে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "ডিএনএ প্রোফাইলিং হত্যারহস্য উন্মোচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু যদি সন্দেহভাজনদের মধ্যে কারও ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিল না পাওয়া যায়, তবে তদন্ত আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।"

নতুন মোড়: কি বলছে তদন্তকারীরা?

টাস্কফোর্স গঠনের পর তদন্ত নতুন করে শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ওই দুই ডিএনএ’র মিল পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তারা হত্যার মোটিভ শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছেন, কারণ মোটিভ বোঝা গেলে খুনিদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।

পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,"আমরা তদন্তের প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখছি। ১৩ বছর আগে যারা জড়িত ছিল, তারা এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছে, তা বের করাই বড় চ্যালেঞ্জ। খুনিরা বেঁচে আছে না মারা গেছে, দেশে আছে নাকি বিদেশে—এসব তথ্য আমাদের সংগ্রহ করতে হবে।"

৬২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ, কিন্তু তদন্তে অগ্রগতি নেই

টাস্কফোর্স ৬২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যার মধ্যে নিহতদের আত্মীয়-স্বজন, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে সন্দেহের যথেষ্ট প্রমাণ মেলেনি।

একজন তদন্ত কর্মকর্তা জানান,"আমরা সাগর-রুনির ঘনিষ্ঠদের, প্রতিবেশীদের, এমনকি সেসময় ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু তদন্ত নতুন কোনো পর্যায়ে যেতে পারেনি।"

হত্যাকাণ্ডের রাতে কী ঘটেছিল? নতুন তথ্য আসছে

টাস্কফোর্সের তদন্তে সেদিনের রাতের ঘটনাগুলোর বিশদ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তারা নতুন কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছেন, যা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।

বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে,হত্যার আগের রাতে সাগর-রুনি কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলেন। তবে সেই ফোনালাপের বিষয়বস্তু কী ছিল, তা এখনও অস্পষ্ট।

হত্যার আগের দিন সাগর অফিস থেকে ফেরার পর কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।

ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামত থেকে বোঝা যায়, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারীরা সম্ভবত ভেতর থেকেই পরিচিত ছিল।

বিচারের অপেক্ষায় পরিবার, সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভ

সাগর-রুনির পরিবার এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। নিহত রুনির ভাই নওশের আলম বলেন,"আমরা বারবার বলেছি, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সঠিকভাবে করতে হবে। এত বছর পরও খুনিরা ধরা পড়ল না, এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য লজ্জার।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন,"সাংবাদিক হত্যার বিচার না হলে গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সাগর-রুনি হত্যার বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।"

তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাব? আগের সরকার কেন ধামাচাপা দিয়েছিল?

নতুন সরকার গঠনের পর এই মামলায় অগ্রগতি হয়েছে। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন,"পূর্ববর্তী সরকার এই তদন্তকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল, কারণ এতে তাদের ঘনিষ্ঠ অনেকের নাম চলে আসতে পারত। ছাত্র আন্দোলনের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্টের নির্দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আমরা আশা করছি, ৬ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা হবে।"

ডিএনএ শনাক্ত হলেই রহস্যের সমাধান?

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএনএ নমুনার সূত্র ধরে খুনিদের শনাক্ত করার সুযোগ রয়েছে। তবে এ জন্য বৃহৎ পরিসরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা জরুরি।

একজন অপরাধ বিশ্লেষক বলেন,"ডিএনএ প্রোফাইলিং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রমাণ, কিন্তু সন্দেহভাজনদের মধ্যে যদি মিল না পাওয়া যায়, তবে তদন্তকারীদের আবার নতুন কৌশল নিতে হবে।"

কবে শেষ হবে বিচার? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে

এই মামলায় তানভীর রহমানসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে দুজন বর্তমানে জামিনে মুক্ত। কিন্তু তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাকিরা অন্য মামলায় কারাগারে আছেন, মূল হত্যা মামলায় তারা সরাসরি আটক নন।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন,"যদি দ্রুত নতুন কোনো তথ্য না আসে, তাহলে মামলাটি আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।"

শেষ কথা: কি হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?

সাগর-রুনি হত্যার তদন্তে অগ্রগতি হলেও চূড়ান্ত সমাধান এখনো অধরা। নতুন তদন্ত দল সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালালেও সন্দেহভাজনদের ডিএনএ’র সঙ্গে আলামতের নমুনা মিল না পাওয়া পর্যন্ত তদন্তের বড় ব্রেকথ্রু পাওয়া কঠিন হবে।

সাংবাদিক সমাজ, পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ মানুষ এখনো আশায় আছেন—বিচার একদিন আসবেই। কিন্তু সেই দিন কত দূরে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়