বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:১২

ছাগল–কাণ্ড: মতিউরের জীবনযুদ্ধে অভিশাপ ও রিমান্ড আদেশ

"ছাগল কাণ্ডের পেছনে লুকিয়ে আছে কী?"

মো. জাকির হোসেন

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ‘ছাগল-কাণ্ড’ নিয়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান দাবি করেছেন, তাঁর জীবনের জন্য এই ঘটনাটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, "আমার পরিবারের কেউ দুর্নীতিবাজ নয়। ছাগল–কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ।"

গ্রেপ্তার ও আদালতে উপস্থিতি: বুধবার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে পুলিশ মতিউর রহমান এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করে। বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।

বিকেল পাঁচটার দিকে মাইক্রোবাসে করে আদালতে নিয়ে আসার পর মতিউর রহমানকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। কিছুক্ষণ পরে তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে এজলাসে নিয়ে আসা হয়। এ সময় পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী মজার ছলে প্রশ্ন করেন,

"মতিউর সাহেব, সেই ছাগলটি কোথায়?" উত্তরে মতিউর বলেন, "পিপি সাহেব, ছাগলটি আছে।"

ছাগল-কাণ্ড থেকে বিপুল সম্পদ: পিপি ফারুকী আদালতে বলেন, "মতিউর রহমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ছিলেন। এনবিআরের সদস্য হিসেবে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার ঘটনায় তাঁদের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদক তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।"

অস্ত্র মামলার অভিযোগ: রাষ্ট্রপক্ষের তরফে জানানো হয়, মতিউর রহমানের বাসায় একটি শটগান পাওয়া গেছে, যার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালেই শেষ হয়েছে। অস্ত্র আইন অনুযায়ী এটি এখন অবৈধ। ওই অস্ত্রের ২৫টি গুলির মধ্যে একটি গুলির কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।

আসামিপক্ষের যুক্তি: মতিউরের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতে বলেন, "অস্ত্রটি বৈধ, কিন্তু লাইসেন্স নবায়ন না করায় এটি অবৈধ বলে দাবি করা হচ্ছে। অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করতে জরিমানা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।"

তিনি আরও বলেন, "মতিউর রহমান মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি যশোর বোর্ড থেকে মাধ্যমিকে স্ট্যান্ড করেছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। এনবিআরে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন।"

আদালতের আদেশ: বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ভাটারা থানায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় মতিউর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।

এদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজকে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর রিমান্ড আবেদনের শুনানি ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

ঘটনার পটভূমি: গত কোরবানির ঈদে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন। এরপর মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য উঠে আসে। দুদক তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে মামলাও দায়ের করে।

এ ঘটনায় মতিউর রহমানের মন্তব্য, "ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার পরিবারকে নিয়ে যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।"

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়