প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৯
গোপন বন্দিশালা থেকে ‘মুক্তি’ সাজানো মামলার আসামি হয়ে
গোপন বন্দিশালা থেকে ‘মুক্তি’ সাজানো মামলার আসামি হয়ে
প্রতিবেদক: মো. জাহিদুল ইসলাম সুমন খন্দকার, চাঁদপুর কণ্ঠ।
গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা ব্যক্তিদের বেশিরভাগই মুক্তি পেয়েছেন সাজানো মামলার আসামি হয়ে। গোপন বন্দিশালায় দিনের পর দিন নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রমাণ উঠে এসেছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত কমিশনের প্রতিবেদনে এই চিত্র ফুটে উঠেছে।
‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জবানবন্দি তুলে ধরা হয়েছে। এতে জানা যায়, বন্দি ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় তাঁদের নির্দোষতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের মুক্তি দিতে গুমের ঘটনার সত্যতা আড়াল করা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এতে তাঁদের মুক্তির পথ সংকীর্ণ হয়েছে এবং তাঁরা বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মিথ্যা মামলার কৌশল ও বিচারব্যবস্থার ঘাটতি গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার তদন্তেও গুরুতর ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকেই। এর ফলে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে।
বিচারিক প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য যাচাই না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশিত বক্তব্যই রেকর্ড করা হতো। এতে করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হতো।
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকায় প্রশ্ন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের গোপন বন্দিশালা থেকে বের করে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির করার সময় তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো গল্প তুলে ধরা হতো। এসব গল্প যাচাই না করে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করায় ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবার সামাজিক অবমাননার শিকার হয়েছেন।
কমিশনের মতে, সংবাদমাধ্যমের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন এবং এ ধরনের সংবাদের সত্যতা যাচাই বাধ্যতামূলক করা উচিত। একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের উচিত নিজেদের ভুল পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে আরও সচেতন হওয়া।
গুমের পুনরাবৃত্তি ও শর্তসাপেক্ষ মুক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুমের ঘটনা বারবার ঘটেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে একই ব্যক্তিকে দুই বা তিনবার গুম করার নজির পাওয়া গেছে। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে যে তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াবেন না।
কমিশনের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এসব ঘটনা দেশের আইনের শাসনের প্রতি আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে চলমান তদন্তে আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে বলে কমিশন আশাবাদী।
চাঁদপুর কণ্ঠের পক্ষ থেকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে প্রশাসন ও বিচারিক ব্যবস্থার সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।