প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:৪৫
ওসি অসুস্থ।। অঘোষিত কর্মবিরতি প্রত্যাহারসহ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণ।। ছাত্রদের দুঃখ প্রকাশ
চাঁদপুর মডেল থানায় ছাত্রদের হাতে পুলিশ কর্মকর্তা হেনস্তার ঘটনায় কার্যক্রম ব্যাহত
একদল ছাত্রের হাতে চাঁদপুর মডেল থানার এসআই হেনস্তার শিকার হওয়ার ঘটনায় থানার কার্যক্রম ব্যাহত, ওসি অসুস্থ এবং থানায় কর্মবিরতি চলছে বলে গতকাল বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারের তাৎক্ষণিক ভূমিকায় এবং ছাত্ররা দুঃখ প্রকাশ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
|আরো খবর
জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়ায় একজন নারীকে মারধরের একটি ঘটনায় ঐ নারীর পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের আশায় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জানানো হয়। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঘটনার বিষয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে কোড়ালিয়ায় ঘটনাস্থলে গেলে দেখেন, ঐ ঘটনার বিষয়ে আহত নারীর পক্ষ থেকে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় পূর্বে দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশের উপস্থিতিতে এ ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত শাহাদাত হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে তার বাহিনীসহ পুলিশের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এমনকি ঐ হামলায় পুলিশ সদস্যদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা করেন। এ সময় পুলিশের নীরব ভূমিকায় ছাত্ররা হতাশ হন । এ অবস্থায় ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা চারদিকে চাউর হলে আরো ছাত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে থানায় ঢুকে পড়ে। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা ঘটনাস্থলে থাকা ঐ পুলিশ সদস্যদের থানায় দেখে এবং ঘটনার তদন্তে যাওয়া এসআই কে দেখে তাকে লাঞ্ছিত করেন। এর পরপরই ঘটনাটির বিষয়ে থানা থেকে অবহিত হয়ে মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ঐ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের আটকের বিষয়ে আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন করে। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী যায়। পরে ঘটনার বিষয় দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ আশ্বাসের পর ছাত্ররা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভেতরে ছাত্রদের হাতে পুলিশ সদস্যদের হেনস্তার ঘটনায় সহকর্মী পুলিশ সদস্যরা গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে অঘোষিত কর্মবিরতি চালানোর প্রয়াস চালান।
এ পরিস্থিতিতে ২ দিনের ঘটনায় পরিস্থিতির কোনো কুল কিনারা না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।
ছাত্রদের দ্বারা সৃষ্ট ঘটনায় মডেল থানা পুলিশের অঘোষিত কর্মবিরতিতে গতকাল থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় । এমন পরিস্থিতির খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় আসেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুদীপ্ত রায়। তিনি থানায় দীর্ঘসময় অবস্থান করে ঘটনার বিবরণ শুনেন এবং থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সাথে সভা করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে সকল কার্যক্রম সচল করেন।
অপরদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর সদর মডেল থানায় পুলিশের সাথে ছাত্রদের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করানোর ব্যবস্থা করা হয়।
নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদস্যরা বলেন, এ ঘটনায় থানায় কর্মরতরা নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছিলেন । তাই অঘোষিত কর্মবিরতির কথা ভাবছিলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে রয়েছে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি সব ঠিক হয়ে যাবে এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালানো শুরু করেন।
পুলিশ সদস্যরা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের অভিভাবক। তাঁরা আমাদের পাশে রয়েছেন সবসময়। তাদের প্রকৃত অভিভাবকসুলভ আচরণের কারণে আমরা কাজে উৎসাহ পাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ্ এখন থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলাবাসী পূর্বের ন্যায় আমাদের সকল সেবা পাবে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের কথা জানান। তিনি বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তার সমাধান হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো কর্মবিরতি নেই। এ কথাটি ঠিক নয়। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলাবাসীকে কোনো গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, কেউ আইনের বাইরে নয়, অতএব ঘটনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে । তিনি পুলিশ বাহিনীকে পূর্বের ন্যায় সকল ধরনের সহযোগিতা করার জন্যে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।