বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের দুটি যুব সংগঠনের চারটি শীর্ষপদে তিনজন নারী

চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের দুটি যুব সংগঠনের চারটি শীর্ষপদে তিনজন নারী
উজ্জ্বল হোসাইন

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। সভ্যতার অগ্রগতির মূলে রয়েছে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নারী ও পুরুষের হাত ধরেই পৃথিবী সভ্যতার পথে এগিয়ে চলেছে। সভ্যতার এ অগ্রযাত্রায় মানবজাতির উভয় অংশের অবদানই গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতাকে সাজাতে-গোছাতে পুরুষ দিয়েছে শ্রম আর তাতে সর্বদা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নারী। পুরুষের শৌর্য-বীর্য আর নারী-হৃদয়ের সৌন্দর্য, প্রেম-ভালোবাসার সম্মিলনেই বিশ্বের সকল উন্নতি সাধিত হয়েছে। তাই নারী, পুরুষের পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়েই কেবল পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলা সম্ভব। তাইতো একজন নারীকে হতে হয় সাংগঠনিকভাবে দক্ষ, মেধা ও মননশীল। তেমনই এই মেধা, মননশীলতা ও কর্মদক্ষতায় ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের যুব সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। এই ক্লাবের দুটি যুব সংগঠন একটি চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাব ও অন্যটি রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাব। এই ক্লাব দুটির অতীত ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবে বহু বছর পূর্বে একজন নারী নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন, তার নাম নাজমা কাঞ্চন। এরপর আর এই ক্লাবে কোনো নারী নেতৃত্বে আসেনি। অন্যদিকে চাঁদপুর রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাবে কখনও নারী নেতৃত্ব আসেনি। সৌভাগ্যক্রমে এ বছর দুটি রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের চারটি শীর্ষপদে তিনজন নারী রয়েছেন। এরা হলেন চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের ২০২৩-২৪ রোটারী বর্ষের সভাপতি রোঃ নাজমুন নাহার এবং রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি রোঃ সুমাইয়া আক্তার ও সচিব রোঃ নাভিনা ইসলাম।

নারীকণ্ঠের পক্ষ থেকে প্রথমে কথা হয় চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি রোঃ নাজমুর নাহারের সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে তিনি ২০২৩-২০২৪ রোটাবর্ষের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৯ সালে রোটার‌্যাক্ট পরিবারের সাথে যুক্ত হন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট রোটার‌্যাক্টর আফজাল কাজীর মাধ্যমে। তিনি বলেন, তিনি শুধু আমাকে সংগঠনের নামটি বলেছিলেন। আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় এই ক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত হই। আমি যেহেতু সেবামূলক কাজের সাথে অনেক বছর ধরে জড়িত, তাই আমার মনে হলো যে, এতো বছর যাবৎ মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি, এই সংগঠনের মাধ্যমে যদি আমি সমাজসেবার সুযোগ পাই তাহলে খারাপ হবে না। আমি শুধুমাত্র মানবিকতার মনোভাব এবং সেবামূলক মনোভাব নিয়েই এই সংগঠনে যোগ দিয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমি কারো কোনো উপকারে আসতে পারলে নিজে খুব আনন্দ পেতাম। তিনি বলেন,

এই ক্লাবে কাজ করতে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। কারণ, এটাই একমাত্র সংগঠন, যেটি নিজেকে সঠিকভাবে তৈরি করার এবং নিজেকে প্রকাশ করার সঠিক প্লাটফর্ম।

তিনি মনে করেন, যদি সাংগঠনিক জ্ঞান অর্জন করার ইচ্ছা থাকে তাহলে এটাই সর্বোত্তম সংগঠন। ম্যানেজমেন্ট করার ক্ষমতা, leadership ability তৈরি করা এবং বৃদ্ধি করা, কো-অপারেশন করার ক্ষমতা, communication করার কৌশল, বন্ধুত্ব বৃদ্ধির কৌশল, personality তৈরির কৌশল, সকল মানুষের সাথে মিশে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা, নিয়মানুবর্তিতা সর্বোপরি সকল প্রকার মানবিক গুণাবলি বৃদ্ধি করার অনেক সুযোগ রয়েছে রোটার‌্যাক্ট ক্লাবে। এছাড়াও সুযোগ রয়েছে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বৃদ্ধির এবং skill development -এর। এই সংগঠনে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা যায় বলে কাজের আনন্দ অনেক বেশি। এই যুব সংগঠনে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমার ক্লাবের পুরুষ রোটার‌্যাক্টররা নিজেরাই নির্বাচিত করেছেন আমাকে। যেহেতু আমি তাদের তুলনায় বয়সে বড়, কিন্তু রোটার‌্যাক্ট অঙ্গনে জুনিয়র, তাই সকলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছন যাতে আগামী একটি বছর এই ক্লাবের মাধ্যমে ভালোভাবে মানুষের সেবা করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয়, সকল পুরুষ রোটার‌্যাক্টর আমাকে শুরু থেকে যেভাবে সহযোগিতা এবং উৎসাহ প্রদান করছেন, আর এই সহযোগিতার ধারাবাহিতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব চাঁদপুরের ২য় নারী সভাপতি এবং ৪৯তম সভাপতি হিসেবে সেরা একটা রোটারী বর্ষ উপহার দিতে পারবো সবাইকে।

রোঃ নাজমুর নাহারের পিতা আজাদ বাহার চৌধুরী ও মাতা নুরের নাহার চৌধুরী। আর স্বামী মোঃ আবু ইউসুফ। তিনি বাবা-মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে ২য়। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী ও মাতা শিক্ষিকা। তিনি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার নিলক্ষ্মী গ্রামে ১৯৮০ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে এসএসসি, ১৯৯৮ সালে এইচএসসি, ২০০১ সালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, ২০০২ সালে ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারী (চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ), ২০১৬ সালে বিএসসি ইন নার্সিং (ফৌজদারহাট নার্সিং কলেজ), ২০১৯ সালে এমপিএইচএফ (Northern University ঢাকা) পাস করেন এবং ২০২১ সালে SRHR মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন Dalarna University, Sweden থেকে (অনলাইনে)। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে নার্সিং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০০৩ সালে মোঃ আবু ইউসুফের সাথে পারিবারিকভাবে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্বামী নার্সিংয়ের ওপর মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে ২৫০ শয্যার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তার স্বামী মোঃ ইউসুফ চাঁদপুর আইডিয়াল নার্সিং কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। পারিবারিক জীবনে এক ছেলে, এক মেয়ে সন্তান রয়েছে তাদের। মেয়ে অর্পিতা একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে চাঁদপুর সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত আছে। আর একমাত্র ছেলে অয়ন চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।

তিন নারী নেতৃত্বের আরেকজন হলেন রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি রোঃ সুমাইয়া আক্তার। ২০১৮ সালের শেষ দিকে তিনি এ ক্লাবে যোগদান করেন। তার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে তিনি রোটার‌্যাক্ট অঙ্গনে আসেন। তিনিই নিজেও একজন রোটার‌্যাক্টর ছিলেন। তার উৎসাহে এ ক্লাবে যোগদান করেন।

রোঃ সুমাইয়া মনে করেন, এই সংগঠনে ব্যক্তিত্ব বিকাশে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর বন্ধুত্ব ও সেবার সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের মধ্যে উন্নততর সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। কারণ রোটার‌্যাক্ট ক্লাব হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন। এখানে একাধিক মানুষের সাথে যেমন পরিচিত হবার সুযোগ রয়েছে, তেমনি একেক জনের কাছ থেকে একেক বিষয়ে শিক্ষালাভ করা যায়। তাই সে দৃষ্টিতে কাজের মধ্যে আনন্দ তো আছেই, সেই সাথে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

ক্লাবের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সদস্যরা বেশিরভাগই পুরুষ। তাদের জায়গা থেকে তারা সবসময়ই সেরা। তিনি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাই অনেক বিষয় রয়েছে সাংগঠনিক দিক দিয়ে যা এখনও অজানা। তিনি বলেন, সত্যি বলতে, আমি অনেক সমর্থন পেয়েছি এবং পেয়ে যাচ্ছি। ক্লাবের প্রতি সদস্য আমাকে উৎসাহ দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছেন। রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের পাশাপাশি তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চাঁদপুর জেলা ইউনিটের যুব প্রধান-০১ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। রোঃ সুমাইয়ার আক্তারের বাবা চাঁদপুর শহরের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। আর মা একজন গৃহিণী। তারা দুই বোন এক ভাই। তার একমাত্র ভাই চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিএ অধ্যয়নরত এবং ছোট বোন আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে।

আরেক নারী নেতৃত্ব চাঁদপুর রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নাম রোঃ নাভিনা ইসলাম। তিনি রোটার‌্যাক্ট আন্দোলনে যোগ দেন ২০১৯ সালের ২৮ জুন। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই রোটার‌্যাক্ট অঙ্গনে আসেন। এ ক্লাবে আসতে তার মা তাকে উৎসাহিত করেছেন।

রোঃ নাভিনা ইসলাম জানান, আমার মা একজন রোটারিয়ান। আমি প্রায়ই মায়ের সাথে রোটারী ক্লাবের মিটিংগুলোতে উপস্থিত থাকতাম এবং সেখান থেকেই আমার রোটারী সম্পর্কে জানা। আর এই জানার মাধ্যমেই আমি চাঁদপুর রূপসী রোটার‌্যাক্ট ক্লাবে যোগদান করি। তিনি মনে করেন, তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই সংগঠনটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে। আর বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ রয়েছে বিধায় আন্তর্জাতিক পরিসরে অগ্রসর হবার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।

ক্লাব হচ্ছে অনেকের সমষ্টি। এখানে একাধিক মানুষের সাথে যেমন পরিচিত হবার সুযোগ বেড়ে যায়, তেমনি একেক জনের কাছ থেকে এক একেকটি বিষয়ে শিক্ষালাভ করা যায়। তাই সে দৃষ্টিতে কাজের মধ্যে আনন্দ তো আছেই, সেই সাথে রয়েছে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ। তিনি বলেন, ক্লাবের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ভাইদের বেশিরভাগই পুরুষ। তাদের জায়গায় তারা সবসময়ই সেরা। তিনি নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই অনেক বিষয় রয়েছে সাংগঠনিক দিক দিয়ে যা আমার অজানা। সত্যি বলতে, আমি ভাইদের অনেক সমর্থন পেয়েছি এবং পেয়ে যাচ্ছি। প্রতি মুহূর্তে তারা আমাকে উৎসাহ দিয়ে যায় এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। রোঃ নাভিনা বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। মা একজন চাকুরিজীবী। তার মা রোটাঃ শাহীন আক্তার ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। তার বড় ভাই চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিবিএতে অধ্যয়নরত, ছোট ভাই এইচএসসিতে এবং ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়