প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর শহরের তিনটি সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনজন নারী। এঁরা দক্ষতার সাথে তিনটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে : চাঁদপুর গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাই স্কুল, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নারী কণ্ঠ বিভাগের পক্ষ থেকে কথা হয় এই তিন শিক্ষকের সাথে।
গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলেয়া ফেরদৌসী। এই বিদ্যালয়টিতে ছাত্র ও ছাত্রী দুটি শাখাই বিদ্যমান রয়েছে। তিনি মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে কুমিল্লা জেলা স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৬ সালে মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ২০২২ সালে তিনি সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়ে হাইমচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মাত্র ২ মাস এখানে দায়িত্ব পালন করে তিনি বদলিজনিত কারণে গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ তারিখ চাঁদপুর গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর দাদার বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও মাতা ছিলেন গৃহিণী। তাঁর স্বামী গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম। তাঁর এক ছেলে আইন বিষয়র পাস করে বর্তমানে চাকুরির চেষ্টা করছেন ও তার ১ মেয়ে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।
হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন সুলতানা ফেরদাউস আরা। শিক্ষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় শিক্ষকতা পেশাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। তাঁর দাদা, নানাও শিক্ষক ছিলেন। বাবা আমিন উল্লা মজুমদার মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।
আমিরাবাদ জিকে হাই স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক পাস করে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে স্নাতক ও ১৯৮৬ হলে স্নাতকোত্তর পাস করেন। শিক্ষকতা পেশায় তিনি প্রথম যোগদান করেন কুমিল্লা ফয়জুন্নেসা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯১ সালে বদলি হয়ে চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন এবং সেখান থেকে বদলি হয়ে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তিনি দু দফা এ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। তারপর তিনি গত ৪ জুন ২০২৩ সাল থেকে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ৩৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তাঁর মতে নিজের তেমন কোনো সাফল্য না থাকলেও নিজের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর সাফল্য রয়েছে বলে তিনি জানান। ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্যকেই তিনি নিজের সাফল্য মনে করেন। তিনি জানান, তাঁর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সাফল্যমণ্ডিতভাবে নিয়োজিত রয়েছেন।
‘বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দুবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও চাকুরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও এখনো পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাননি কেন’ এমন প্রশ্নে তিনি নিজের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন। শিক্ষকতা পেশাকে উপভোগ করে তিনি এ পেশায় ভালোই আছেন বলে নারীকণ্ঠকে জানান। বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহকর্মীর সহযোগিতা নিয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
পারিবারিক জীবন চলছে ব্যবসায়ী স্বামী ও তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে। তাঁর ছেলে ও মেয়ে দু' জনই শিক্ষা জীবন শেষে চাকুরি করছেন।
চাঁদপুরের আরেকটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাতৃপীঠ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শিরিন আক্তার। তিনি ১৯৯৭ সালে টেকনিকেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন। পরবর্তিতে ২০০৩ সালে বদলি হয়ে মাতৃপিঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হসেবে যোগদান করেন। ২০২৩ সালের ৫ জুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর পানাউল্লাহ মিজি বাড়ী। তাঁর স্বামী মোশারফ হোসেন হাজিগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সরকারি চাকুরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে মোশাররফ হোসেন হাজীগঞ্জ আইডিয়েল কলেজে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।