রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

রোগীদের কাছ থেকে ‘টাকা’ নেননি মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান
আল-আমিন হোসাইন ॥

সময়টা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। সেদিন থেকে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনী দ্বারা নিরস্ত্র অসহায় অনেক বাঙালি শাহাদাতবরণ করেন। অনেকে আবার আহত হন। মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাহত ও নিরীহ জনগণের চিকিৎসাসেবা দেয়ার মাধ্যমে সুস্থ করতে অনেকেই আত্মনিয়োগ করেন। তাঁদের দলেরই একজন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান।

ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়াশোনা করছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন চিকিৎসক হওয়ার ধাপটা পার হওয়ার আগেই তিনি চিকিৎসাসেবা প্রদানের মুখোমুখি হন। যুদ্ধাহত ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালীন আহত অনেক মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করেন। দুর্ভাগ্যবশত আকস্মিক পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে শিকার হন নির্মম পাশবিক নির্যাতনের। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনী তাঁকে দীর্ঘ ১ মাস ১৭ দিন কারাবাসে নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানী বাহিনী কারাগার থেকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নির্যাতনের জন্যে নেয়ার পথে তিনি রাতের অন্ধকারে গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মধুপুর বন দিয়ে ঢাকায় এসে আত্মগোপনে থাকেন। সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা স্মরণ করে চোখের পানি অবলীলায় ছেড়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান।

১৯৭৪ সালের কথা। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে চিকিৎসক হিসেবে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ময়মনসিংহে সরকারি চাকুরির পাশাপাশি তখন তিনি প্রতি সপ্তাহে পাশের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতেন। সেখানে রোগীদের সেবা দিতেন ঠিকই, কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিতেন না।

‘কেনো রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেননি’ জানতে চাইলে ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি তখন ফুলবাড়িয়ায় একটি ফার্মেসিতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতাম। ফুলবাড়িয়া তৎকালীন দরিদ্র-অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় চিকিৎসকের টাকা দেয়ার সামর্থ্য গরিব মানুষের বলতে গেলে ছিলোই না। এ বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দিতো। আমার ব্যক্তিগত আদর্শে উদ্বেলিত এবং মমত্ববোধ থেকে আমি তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতাম। ফলে ফার্মেসি কর্তৃপক্ষের সাথে আমার মতবিরোধ দেখা দেয়। আমি তখন মহান আল্লাহর কাছে গভীরভাবে প্রার্থনা করি, যেনো আমৃত্যু বিনামূল্যে রোগীদের সেবা প্রদান করতে পারি তার তৌফিক দেন। আল্লাহ আমার মনোবাসনা পূরণ করেছেন। এজন্যে আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে শোকরিয়া আদায় করি।’

তিনি জানান, গরিব-অসহায় মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়াটা তাঁর কাছে সমীচীন মনে হয়নি বিধায় তাঁর ৫০ বছরের পেশাগত জীবনে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থাপত্রের জন্যে রোগীদের কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেননি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক পরবর্তীতে সৌদি আরবের রিয়াদে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। সেখান থেকে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে চাঁদপুরের প্রথম বেসরকারি মহিলা সংস্থা ‘চাঁদপুর আত্মনিবেদিতা মহিলা সংস্থা’র পক্ষে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করেন এবং প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রোগীদের সেবা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, বিগত ১৪ বছর যাবত তিনি নিজস্ব ভবনে এবং নিজস্ব অর্থায়নে চাঁদপুর পৌরবাসীকে সরকারের পক্ষে সম্পূরক হিসেবে বাচ্চাদের টিকা, পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃত্বকালীন সেবা প্রদান করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি হানী ছিদ্দিক মেমোরিয়াল হস্পিটাল গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

ব্যক্তিগতজীবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান দুই সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী নাসরিন বেগমও একজন সুচিকিৎসক। তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান ডাঃ এসএম শীষ রহমান বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক। কনিষ্ঠ সন্তান এসএম শুভ রহমান কানাডার ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে কম্পিউটার প্রস্তুতকারী কোম্পানী সিডিডব্লিউ-তে কর্মরত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়