প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
কবিতা লেখার শুরুর দিনগুলোতে এই প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ ছিলো। কিন্তু যতোই দিন যাচ্ছে, যতোই জড়িয়ে যাচ্ছি কবিতার সঙ্গে, ততোই অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর। কবিতা লেখার শুরুর দিনগুলোতে শুধু কি কবিতা লিখতাম? প্রেম করা, গান গাওয়াসহ কত কাজে ছড়িয়ে পড়েছিলো আমার হৃদয়। যৌবনের অফুরন্ত শক্তির প্রতাপে যাতেই হাত দিই, তাতেই সোনা ফলে। আর কী দৃপ্ত সব প্রতিজ্ঞার দল!
তারপর গড়াতে থাকা দিনগুলোর সাথে সাথে ঝরে গেছে অনেক কিছু। আর তাতে ক্রমশ নিঃসঙ্গ হতে হতে যা থেকে গেলো, অর্থাৎ কবিতা, সেই-ই হয়ে উঠলো প্রগাঢ়তম বন্ধু। কিন্তু কবিতা কেনো থাকে? কবিতাকে যে ভালোবেসেছে, কবিতার সঙ্গের স্বাদ যে পেয়েছে, সে আসলে কবিতাকেই সঙ্গী করে ফেলে শেষ পর্যন্ত। আর কবিতাও ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে, জানে যুগ্ম হয়ে জীবন কাটাতে। তাই এই জুটির বিচ্ছেদ হয় না সচরাচর।
এই বিপুল মহাবিশ্বে অজস্র শব্দ হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। জ্বলে যাবার, ভেঙে যাবার, যুক্ত হবার এসব শব্দস্তূপের প্রায় কিছুই কোনো কর্ণকুহরেই পৌঁছায় না, কেননা মাধ্যম ছাড়া শব্দ অচল। কিন্তু মহাবিশ্ব মাধ্যম পাবে কোথায়? পৃথিবীতে বাতাস আছে বলে যেমন আমরা শুনতে পাই, তেমনি মহাবিশ্বের শব্দ শোনার কাজটা আমি করি আমার কবিতা দিয়ে। অর্থাৎ আমার কবিতাও একটা মাধ্যম। জীবন কী এবং এর অর্থই বা কী, তার কিঞ্চিৎ আভাস আমি পেয়েছি আমার কবিতার ভেতর দিয়েই।
তুমি আসবে বলে
বহু প্রতীক্ষার পর বহু বছর পেরিয়ে
আবার হবে দেখা
হবে কথা কিছু তো গোপনে
যে কথা হয়নি বলা কোনো এক কালে।
আজি বসন্তের গোধূলিবেলায় সিক্ত হিয়ার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে বাজে
তোমার পদধ্বনি এই বুঝি এলে মোর তরে।
আমি পুষ্পমাল্য বিছায় রেখেছি জোছনার আলোয় গৃহ সাজিয়েছি
জোনাকির রঙে
আজি ফাগুন হাওয়ায় ভিজে গেছে মন উঠেছে কাঁপন
গোপন সুধা মত্ত পানে তুমি আসবে বলে।
তোমারই লাগি যৌবনখানি পুষ্পে পুষ্পে গেছে শাখা ভরি
তোমারই পানে নাহি চাহিবার পারি ওগো প্রিয় একটু সবুর করো
তব লাগি মোর হিয়ার কাঁপন বেড়ে গেছে যেন শতগুণ করি।
এ কোন্ লাজে মরমে যে মরি
আজি এই তিমির আঁধারে
বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে
ভালোবাসবে কি মোরে কানায় কানায় ভরি।
ভয়ে মোর ধরেছে কাঁপন জানি না কি হয় অজানা ভয়
তবু তোমার পানে রহিবো চাহি ফিরাইবো না দুটি আঁখি।
বাহু পাতিয়া জড়াইয়া রাখিও গোপন স্বপ্নে বিভোর থাকিও
বাসিবো ভালো আপনারে বিলিয়ে এরপর হবো শান্ত।
আমি তারার আলোয় প্রদীপ জ্বালিয়েছি।
জোছনার সাথে দিয়ে আড়ি
আবেগি মনে
তুমি আসবে বলে।
হঠাৎ কথোপকথন
আচ্ছা, তুমি কি বৃষ্টিপ্রেমী?
না! কেনো বৃষ্টি কি তোমার বড্ড প্রিয়?
হুম, বলতে পারো।
আমার আমিকেই আমি খুঁজে পাই বৃষ্টির প্রতিটি ফোটায়।
যখন আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায় তখন তোমার ভয় করে না?
ভয় করবে কেনো? ওরা তো আমার মনেরই প্রতিবিঘ্ন!
বজ্রের ঝলকানিতে যখন পুরো আকাশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় তখন!
দূর বোকা! ওটা তো আমার হাহাকারের তীব্র আর্তচিৎকার মাত্র
যখন আকাশ থেকে ফোটায় ফোটায় তীক্ষè জলধারা তোমার চিবুক।
ব্যথা অনুভূত হয়?
ওগুলো তো আমার কষ্টের বহিঃপ্রকাশ মাত্র
তুমি আসলেই একটা পাগল।
হুম, আমি বড্ড পাগল বৃষ্টির জন্য।
ঠিকানাবিহীন পথ
ছুটে চলেছি অজানা পথে
ঠিকানা কোথায় পাইনি
আজও তবু চলে যাই সমুদ্রের স্রোতের মতো,
বিশ্রামহীন পাখির মতো।
আমি শুধু দূরত্ব অতিক্রম করছি,
শুরু জেনেছি শুধু-
শেষ কোথায় জানি না ।