প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
শিশুদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সরলতা অকৃত্রিম। সব মানুষকে শিশুরা ভালোবাসে না। সবাই শিশুদের সমান গুরুত্ব দেন না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা শিশুদের ভালোবাসেন। এদেশের শিশুরা কীভাবে আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করবে সে কথা ভাবেন। কোমলমতি শিশুদের বইয়ের চাপ কমাতে ও পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করতে তিনি পরামর্শ-নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি শিশুদের সান্নিধ্যে অনুষ্ঠান করেন। তার শাসনামলে প্রতি বছর সরকারি খরচে প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়। বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসবটিও তিনি শিশুদের নিয়ে করেন। ২০১১ সালে শিশুদের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আসুন, আমরা আমাদের বর্তমানকে এই শিশুদের জন্যে উৎসর্গ করি।’ প্রচার মাধ্যমের প্রভাবে শিশুরাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিনে, ভালোবাসে।
শিশুদের ভালোবাসার শেখ হাসিনা দেশের জনগণেরও প্রেরণা। পদ্মা সেতুর কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক অর্থ বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিবাদ করে ২০১২ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের নিজস্ব অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সে চ্যালেঞ্জে তিনি জয়ী হয়েছেন, প্রিয় বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে। ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালত পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মামলাটি খারিজ করে দেয়। শেখ হাসিনার উদ্যোগ, সাহস ও প্রেরণায় দেশের অর্থে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। বাংলাদেশের এই সামর্থ্য শুধু অর্থনীতির অঙ্কে সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের জনগণকেও নতুন করে আত্মবিশ্বাসী করেছে। শেখ হাসিনার সততা, সক্ষমতা নবপ্রাণে সঞ্চারিত হয়েছে। দেশের জন্য এর গুরুত্ব অনেক। কারণ প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানের কাছাকাছি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সে অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস রোধে তার কয়েকটি উদ্যোগও দেশ ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৭ সালে ‘পিপলস এন্ড পলিটিক্স’-এর এক গবেষণায় বিশ্বের অন্যতম সৎ শাসকের স্বীকৃতি পেয়েছেন শেখ হাসিনা। তার নিয়মানুবর্তিতা, কর্ম, নেতৃত্বের সংস্পর্শে এসে অনেক নেতাকর্মী ও আমলা সততার জীবনবোধে অভ্যস্ত হয়েছেন।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালনার পাশাপাশি দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বয়স্ক ভাতা’, ‘বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ভাতা’, ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, ‘গৃহায়ন’, ‘আদর্শ গ্রাম’, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ কর্মসূচিসহ অনেক মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি এ ধারা অব্যাহত রেখে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষেত্রে দেশকে যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বে (১৯৯৫-৯৬ সাল) দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। তার টানা সরকার পরিচালনা এবং প্রায় এক যুগের শাসনামলে দেশের দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০.৫ শতাংশে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। ৩ জুন ২০২১ তারিখে প্রকাশিত তথ্যে দেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ২৯ জুন ২০২১ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমি মুগ্ধ, শেখ হাসিনার কাছে বিশ্ববাসীর অনেক কিছু শেখার আছে।’ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স ও ইনডিকেটরে’ দেখা গেছে, গত ১০ বছরে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মানদ- পূরণ করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর ইকোনমিকস এন্ড বিজনেস রিসার্চ’ (সিবিআর)-এর প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫টি বড় অর্থনীতির দেশের একটি। ২০৩৩ সালে অর্থনীতির মানদ-ে বাংলাদেশের পেছনে থাকবে মালয়েশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ।
শেখ হাসিনার নীতি, দর্শন, কর্ম ও ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে উন্নয়ন তত্ত্ব’ মানবিক বাংলাদেশ গঠনে অধিক কার্যকর। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী হলেও শেখ হাসিনা আসলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর।’ দুর্যোগকালীন সময়েও তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ১২ আগস্ট ২০২০ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে সরকারি খরচে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালে প্রায় ১২ লাখ অসহায়-নির্বাসিত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বমানবতার নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শেখ হাসিনা। জনগণের ভালোবাসাসহ তিনি অর্জন করেছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’-এর স্বীকৃতিসহ অনেক মানবিক বিশেষণ।
শেখ হাসিনা একজন লেখক, পাঠক, গবেষক, ধার্মিক, দার্শনিক। অক্টোবর ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার লিখিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৩৫টি এবং তাকে নিয়ে রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রায় ১০০টি। দুই যুগের অধিক তিনি এ দেশের রাজনীতির প্রভাবশালী নিয়ামক, মহান শিল্পী, জীবন্ত এক কিংবদন্তি। বিশ্বের অন্যতম দক্ষ ও সেরা প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতিসহ তিনি অর্জন করেছেন পঞ্চাশের অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বাংলার মানুষও মনে করে, শেখ হাসিনা দেশিকোত্তম ব্যক্তি, সর্বোত্তম পথ নির্দেশক, দেশহিতব্রতী মানবিক শাসক। প্রত্যহ-প্রতিমুহূর্ত দেশের কল্যাণে তিনি অবিচল ও উন্মুখ থাকেন। দেশমান্য শেখ হাসিনাও বারবার মন্ত্রোচ্চারণের মতো বলেছেন, ‘দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারা বিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু না।’ সে স্বপ্নে আজকের শিশুরা গর্ব করে বলে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।’
ড. মুহম্মদ মনিরুল হক : সহযোগী অধ্যাপক ও লেখক।