শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪০

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় হাইকোর্টের রায়: লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস, সাজা কমলো আরও ছয়জনের

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় হাইকোর্টের রায়: লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস, সাজা কমলো আরও ছয়জনের

প্রতিবেদক : মোঃ জাহিদুল ইসলাম সুমন খন্দকার

চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় হাইকোর্ট আজ বুধবার (তারিখ) রায় ঘোষণা করেছেন। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে তাঁদের খালাস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।

ঘটনার পটভূমি ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) ঘাটে ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করা হয়। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (যাঁর অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে), ভারতের উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া এবং দুই গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া অস্ত্র আইনে দায়ের করা পৃথক মামলায় একই ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিস্তারিত হাইকোর্টে আজকের রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ডের রায় সংশোধন করে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবীদের বক্তব্য সরকারি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের রায়ে কয়েকজনের খালাস এবং সাজা হ্রাস হওয়ায় তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, “এটি ন্যায়বিচারের একটি উদাহরণ। আমাদের মক্কেলরা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থেকেছেন। আশা করি, আদালতের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাঁদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত হবে।”

আদালতের পর্যবেক্ষণ হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, মামলার কিছু আসামির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে চোরাচালানের ঘটনায় সরাসরি সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে আরও স্পষ্টতা প্রয়োজন ছিল। তাই সাজা হ্রাস এবং খালাসের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ হাইকোর্টের এই রায়ের পর সরকারের পক্ষে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে, মামলায় খালাস পাওয়া আসামিরা দ্রুত মুক্তি পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা।

অস্ত্র চোরাচালানের মামলার গুরুত্ব ২০০৪ সালের এই চোরাচালানের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। আটক করা অস্ত্রের মধ্যে ছিল ৪ হাজার ৯৩০টি অত্যাধুনিক অস্ত্র, ২৭ লাখ গুলি এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। তদন্তে বেরিয়ে আসে যে এই অস্ত্রের চালান ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য আনা হয়েছিল।

হাইকোর্টের এই রায় বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই এই রায়ের প্রভাব নিয়ে ভবিষ্যতে পর্যালোচনা চালিয়ে যাবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়