প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫, ১২:০১
যৌতুকের মামলা তুলে না নেওয়ায়
সাবেক স্ত্রীর নগ্ন ছবি ছড়ানোর অভিযোগ পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে

নোয়াখালীর সদর উপজেলার একটি গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে পুলিশ কনস্টেবল স্বামী তার স্ত্রীর বিবস্ত্র ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই গৃহবধূ লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
অভিযুক্ত হাসান মাসুদ (২৭) জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুজাহিদপুর গ্রামের আবুল কালাম মেম্বার বাড়ির আবুল কালামের ছেলে। তিনি বর্তমানে লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা যায়। তার বিপি নং-৯৮১৮২১১৩৬৭।
মামলা ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূ সদর উপজেলার একটি গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আনসার সৈনিকের ২৯ বছর বয়সী মেয়ে। তিনি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। ২০২২ সালে তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন। মাসুদ বিয়ের পর স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে মারমুখী আচরণ করতো স্বামীর পরিবারের সদস্যরা। তাই বাধ্য হয়ে তিনি বাবার বাড়িতে থাকতেন। মাসুদ চাকরিতে পদোন্নতি ও পুলিশ ক্যান্টিনে ব্যবসা করার নাম করে কৌশলে কয়েক ধাপে ৬ লাখ টাকা স্ত্রীর থেকে হাতিয়ে নেয়। টাকা দেওয়ার স্থিরচিত্রও সংরক্ষিত রয়েছে। এরপর আরো ৩লাখ টাকা দাবি করে। স্বামী কর্মস্থলে থাকায় স্ত্রীকে ইমু, ম্যাসেঞ্জারে কল করে আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বাধ্য করতো। এরপর স্ত্রীর বিশেষ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও নিজের মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর ৩নং আমলী আদালত নোয়াখালীতে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মাসুদ ও তার বোন নাজমা বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা আদালত থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি ধমকি দেয়। মামলা তুলে না নেওয়ায় স্বামী মাসুদ, তার বোন ফেরদৌসী বেগম ও ভাই জহিরুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ফেক টিকটক, ফেসবুক আইডি থেকে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বিশেষ মুহূর্তের অন্তরঙ্গ বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে ধরনা দিয়ে পুলিশ স্বামীর দাফটে উল্টো অসহায় বনে যান। এক পর্যায়ে সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দেন। আদালত নোয়াখালী সিআইডিকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেয়। নোয়াখালী সিআইডির তাৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদবির করলে ভুক্তভোগী নারীর প্রতিকূলে প্রতিবেদন দেন। উল্টো ভুক্তভোগীর পরিবার ও তার মামলার সাক্ষীদেরসহ ১৪জনকে আসামি করে পুলিশ সদস্যের বোন বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কনস্টেবল হাসান মাহমুদ বলেন, এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। যা হবার আদালতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকতার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। হাসান মাহমুদ নামে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে লক্ষ্মীপুরে কর্মরত রয়েছে বলে জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।