রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

সাইকেলে পাহাড় চূড়ায়
অনলাইন ডেস্ক

পাহাড়ের ওপর দিয়ে তৈরি পথ। আঁকাবাঁকা আর উঁচুনিচু এ পথের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার ফুট ওপরে। এ পথ চলে গেছে বান্দরবানের আলীকদম থেকে থানচি বা থানচি থেকে আলীকদম। আর এ উঁচু পথেই সাইকেল অভিযানে নেমেছি আমরা দুজন। অভিযানের আরেক সঙ্গী সাইক্লিস্ট আবুল হোসেন আসাদ।

অভিযানের শুরুটা করি আলীকদম থেকে। প্রথমে কক্সবাজার থেকে বাসে সাইকেল নিয়ে আসি চকরিয়ার হাঁসেরদিঘি মোড়। এরপর সেখান থেকে লোকাল বাসে আলীকদম। আলীকদম বাসস্ট্যান্ড থেকে সোয়া ১০টার দিকে সাইকেল চালানো শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসি আলীকদম জিরো পয়েন্ট। এখান থেকে থানচির দূরুত্ব ৩৩ কিলোমিটার।

সমতলের পাশাপাশি পাহাড় চূড়ায় সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যেই আমাদের এ অভিযান। এছাড়া এ অভিযানের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের সাইক্লিস্ট বা পর্যটকদের কাছে এ পথের সৌন্দর্যের কথা পৌঁছে দেয়াও আমাদের উদ্দেশ্য।

আলীকদম থেকে থানচির এ পথ নির্মাণ বা বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ও ১৭ ইসিবি, এসডব্লিউও এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আনুষ্ঠানিকভাবে এ পথ খুলে দেয়া হয় ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই।

আলীকদম গ্রাম হয়ে আমরা এগিয়ে চলি। দুই কিলোমিটার যেতেই শুরু হয়ে যায় পাহাড়ি পথ। নির্জন এ পথে দুজনের সঙ্গী কেবল পাহাড়ি গাছগাছালি আর সূর্যের আলো। আর আস্তে আস্তে পথ যতো আগায়, পথের উচ্চতাও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে ক্লান্তিও ভর করতে থাকে শরীরে। মাঝে মধ্যে যারা বাইক বা চান্দের গাড়িতে (জিপ) করে আলীকদম বা থানচি আসা-যাওয়া করছেন, তারা আমাদের দিকে এক ধরনের কৌতূহলে চোখে তাকান সেটা আমরা বুঝতে পারি। হয়তো তারা মনে মনে ভাবেনও- কষ্ট করে এ উঁচু পথে সাইকেল চালানোর দরকারটা কী?

আঁকাবাঁকা আর উঁচুনিচু পথ ধরে চলছি আমরা। ঠিক উঁচুনিচু বলা যায় না, বরং অনেকটা পিরামিডের মতো। আসলে পথটা উঠতে যেমন খাড়া, আবার নামতেও ঠিক তেমনি ঢালু। তাই ওপরে উঠতে কষ্ট হলেও নিচে নামতে আবার আরামই লাগে। আবার আঁকাবাঁকাটাও ঠিক সাধারণ আঁকাবাঁকা নয়, অনেকটা পেঁচানো বলা যায়। তাই পথ চলতে ভয়ের কারণও আছে। ঢালু পথে নামার সময় যদি কোনো কারণে সাইকেলের ব্রেক না ধরে তাহলে সোজা পাহাড়ের নিচে। সেজন্যে সতর্কটা ছিলো জরুরি। অবশ্য পথের কিছুটা পরপরই সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড দেয়া আছে। যেমন ‘সামনে ডবল আঁকাবাঁকা পথ’; কিংবা ‘সামনে বিপজ্জনক নি¤œগামী ঢালু রাস্তা’- এমন সাইনবোর্ড প্রায়ই চোখে পড়ে। পথের কোথাও দু পাশেই পাহাড় রয়েছে, আবার কোথাও পাহাড় ঘেঁষে পথ। মূলত পুরো পথটাই পাহাড় চূড়ার উপর দিয়ে। আমরা মাইলফলক এলেই থামি। বিশ্রাম নিই, সঙ্গে থাকা পানি বা খাবার খাই।

প্রায় ৯ কিলোমিটার চালানোর পর আসি থিংকুপাড়া বাজার। বাজারে দোকানের সংখ্যা ১০-১২টি। দোকানিরা সবাই আদিবাসী নারী ও পুরুষ। দুপুর হওয়াতে দু-একটি ছাড়া সব দোকান খোলা ছিলো না। এক দোকানের পাশে দেখি একজন আদিবাসী নারী তাঁতে কাপড় বুনছেন। এখানে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার প্যাডেলে পা রাখি।

পথ যতো চলি, পথের উচ্চতাও বাড়ে। আর উচ্চতা থেকে আশপাশের পাহাড়, পাহাড়ি সৌন্দর্যটাও একটু অন্যরকমভাবে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। মাঝে মধ্যেই দূর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে দেখা মেলে আদিবাসীদের ঘরবাড়ি। কোথাও কোথাও পথের পাশেও আদিবাসীদের ঘরবাড়ির দেখা পাই। আদিবাসী নারী-পুরুষদের চলাফেরাও চোখে পড়ে।

প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ বিকেলে থামি আডুপাড়ায়। ক্লান্তিও লাগছে বেশ। তাই বিশ্রাম নিতে নিতেই সিদ্ধান্ত নিই, এবার এ পর্যন্তই। অন্য আরেকদিন পুরো পথ পাড়ি দেয়ার প্রত্যাশা নিয়ে সন্ধ্যার আগে চেপে বসি চান্দের গাড়িতে। আর সাইকেল উঠিয়ে দিই গাড়ির ছাদে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়