প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
সুন্দর স্বাস্থ্যবান একজন মানুষ যে ভিতরে ভিতরে বিষণœতায় ভুগছে অনেক আপন মানুষও তা বুঝতে পারে না। ডিপ্রেশন পড়াশোনায় ভালো না করার জন্যে হতে পারে, আর্থিক সমস্যার কারণে হতে পারে, প্রিয়জনের মৃত্যু ডিপ্রেশন তৈরি করে, ভালোবাসায় ব্যর্থ হলে ডিপ্রেশন চলে আসে, আরো নানাবিধ কারণে ডিপ্রেশন তৈরি হতে পারে এবং এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে বের করা যায়নি।
বিষণœতা কেনো হয় এবং এর থেকে মুক্তির উপায়
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি যা করেছি গত ১ বছরে তা হলো, আমি ডিপ্রেশনে যাওয়ার পরে যেহেতু স্বাভাবিক ভাবে যে কাজগুলোতে আনন্দ পাওয়া যেতো, ডিপ্রেশনের ওই সময়টাতে তা পাওয়া যায় না। তাই আমি ব্যতিক্রমী কিছু করতে চেয়েছি। যেগুলো আগে আমার করা হয়নি, আমি তাই করেছি। আমি পথশিশুদের, ট্রান্সজেন্ডারদের সপ্তাহে একবার খাবার বা টাকা দিয়েছি। প্রতিবন্ধীদের সাথে সময় কাটিয়েছি।
আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ব্যাপারে রাগ করে থাকলে তা মনে না রেখে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি চিন্তা করেছি হাসপাতালের রোগীদের কথা যারা বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে, সৃষ্টিকর্তা আমাকে তো তাদের চেয়ে অনেক ভালো রেখেছেন। আমি ভালো নাই, অন্যরা আমার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে এই কথা ভাবা যাবে না। তা হলেই ডিপ্রেশন বেড়ে যাবে। আমি মনে করেছি, সবারই অনেক সমস্যা আছে যেগুলো আমি জানি না।
মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর কেউই সুখী নয়। আমি নিজের মনকে বুঝিয়েছি সৃষ্টিকর্তা আমার জন্যে যেমনটা পরিকল্পনা করেছেন, ঠিক তেমনটাই ঘটবে। আমি ২০২০ থেকে ২০২১ সাল, এই ১ বছরে সবসময়ই আমার সবটুকু দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি নিজের মনকে বুঝাতে আমার জীবন একটাই, আমি যা হারিয়েছি বা যে সময় চলে গেছে তা আর ফিরে আসবে না।
ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা। আমি তাই করেছি। আমার রান্না করতে খুব লাগে। যে কোনো কাজ যা আপনার ভালো লাগে সেসব কিছুই বিষণœতা দূর করতে সাহায্য করে। আমি বিষণœতা থেকে বের হয়ে আসতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সারাদিন নিজের সাথে কথা বলতাম। বার বার বলতাম ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং এই কাজ শুধুমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। সব সময় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেছি। নিজের বিশ্বাসকে শক্ত করার মাধ্যমে আমি শক্তি খুঁজে পেয়েছি। কলেজে আমার সাইকোলজি ছিল। আমি জানি বিষণœতায় নিজ নিজ ধর্মের প্রার্থনা মন ভালো করতে এবং শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। বিষণœতার সময় আমাদের সবচেয়ে বেশি যা করা দরকার তা হল ধৈর্য ধারণ। আমার মনে বিশ্বাস ছিলো আমি সুস্থ হয়ে যাবো। সব কিছুর সমাধান আছে এবং সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রতিটি কাজের মাঝেই আমাদের বিশ্বাস আর ধৈর্য ধারণ করে আগাতে হবে। বিষণœতা চলে গিয়ে ধীরে ধীরে মানসিক শান্তি আসবে। আমার তাই হয়েছে।
বিষণœতা একটি মানসিক ব্যাধি। যতো চিকিৎসা বা পরামর্শই নেয়া হোক, নিজে থেকে সর্বাত্মক চেষ্টাই বিষণœতা বা ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার প্রাথমিক উপায়। আমি আমার নিজের কাউন্সিলিং নিজেই করেছি এবং আজকে আমি বিষণœতা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পেরেছি।
আর এতোটুকু মনে রাখতে হবে যে, Once you choose hope, aûthing is possible. Christopher Reeve.