প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। কম খরচ আর স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় খুশি কৃষকরা। আর সূর্যমুখী ফুল চাষে সহযোগিতা করে কৃষকদের উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সবুজের মধ্যে হলুদ ফুলগুলো অপরূপ সৌন্দর্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। প্রজাপতি যেমন ফুটে আসছে তেমনি প্রকৃতিপ্রেমীরা আসছেন দল বেঁধে।
এ উপজেলায় আগে ছোট পরিসরে সুর্যমুখীর চাষ হলেও নতুন জাতের সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও। সূর্যমুখীর চাষ করে সফল হয়েছে কৃষি বিভাগ। সবুজের মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি আর এটি চাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগে শুধু প্রধান কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল হলেও বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ফুল-ফল উৎপন্ন হয়। সে কারণেই অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রাখে। রান্নার জন্যে সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে এবং শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ এ তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এক কথায় সূর্যমুখী তেল মানব দেহের মহাওষুধ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
সূর্যমুখীর চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী পৌর এলাকার আবুল কাশেম বলেন, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। একই সাথে হাজারো সূর্যমুখী ফুটে আছে। খুব ভালো লেগেছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৃষক মোশারফ পাটওয়ারী বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষ করেছি। অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, তবে অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। সার, ওষুধ কম লাগে, ফলে অধিক লাভবান হতে পারি। ফুল দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে। আশা করছি, সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবো। আমার চাষাবাদ দেখে আশেপাশের কৃষকরাও এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
সূর্যমুখী চাষীরা জানায়, বীজ বপনের ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। এক একর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমিতে প্রায় এক টন বীজ উৎপাদন হয়। এক টন বীজ ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ উপজেলায়। আমরা ইতোমধ্যে ১০টি স্থানে সূর্যমুখী ফুলের প্রদর্শনী দিয়েছি। এছাড়াও অনেক চাষী সূর্যমুখীর চাষ করেছে বলে আমরা জেনেছি। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় তদারকি করবো। আমরা উপজেলায় উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।