প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে পুরাণবাজার ব্যবসায়ীদের সাথে কাস্টমস এন্ড এক্সসাইজ ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে চাঁদপুর চেম্বার কার্যালয়ের মিলনায়তনে। ভ্যাট প্রদান সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে গতকাল ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের গৃহীত সকল কার্যক্রমের প্রতি আস্থা প্রকাশপূর্বক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একসময়ের ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজারের ব্যবসায়িক পরিচিতি এখন আর আগের মত নেই। মেঘনার প্রবল ভাঙ্গনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে হাজীগঞ্জ, মতলব, কচুয়া, শাহরাস্তি, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় পুরাণবাজারের অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। আর এই মন্দাভাব দূরীকরণসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দ। পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখেনি তারা সামাজিক সেবামূলক কাজেও সমানভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি ভ্যাট আদায় সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বলেন, পুরাণবাজার নদী সিকিস্তি এলাকা, নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করতে গিয়ে চাঁদপুর ছেড়েছেন। ফলে চাঁদপুরের ব্যবসায়িক সুনামে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তিনি আরো বলেন, পুরাণবাজারের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করেন তা যেমন সত্যি, তেমনি তারা চেম্বারের যেকোনো সিদ্ধান্তকেও মূল্যায়ন করেন। আর চাঁদপুর চেম্বারও সেই দিক লক্ষ্য রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, পুরাণবাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে ভ্যাট প্রদানে উৎসাহী করেছে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স। ছোট বড় সকল ব্যবসায়ী যাতে ভ্যাট দিতে উৎসাহী হন এজন্যে ব্যবসায়ী ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের মাঝে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর ধারণা আমরা নিয়মিত ইনকাম টেক্স, খাজনা দেই। আমাদের রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স, তারপরও ভ্যাট আবার দিব কেন বা ভ্যাট আবার কী? তাদের এই না জানাটা অমূলক নয়। তাই সেলস ট্যাক্স সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দেয়াটা স্বাভাবিক। তিনি ব্যবসায়ীদের মাঝে ভ্যাট সংক্রান্ত কোনো জটিলতা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যে কাস্টমস এন্ড এক্সসাইজ ও ভ্যাট চাঁদপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার ভূদেব চক্রবর্তীসহ সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে একান্তভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাট প্রদানের আওতামুক্ত করা যায় কিনা তা দেখার জন্যে ভ্যাট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভায় চেম্বার নেতৃবৃন্দের মাঝে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অব ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, পরেশ চন্দ্র মালাকার, গোপাল চন্দ্র সাহা, আলহাজ্ব লিয়াকত পাটোয়ারী, চেম্বার সচিব আব্দুল মোতালেব শেখ টুটুল ও সাংবাদিক মিজানুর রহমান। ব্যবসায়ীদের মাঝে বক্তব্য রাখেন কামাল পাটোয়ারী, লিটন সাহা, সুবোধ সাহা, হারুনুর রশিদ খাঁ প্রমুখ।
কাস্টমস এন্ড এক্সসাইজ ও ভ্যাট চাঁদপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার ভূদেব চক্রবর্তী ব্যবসায়ীদেরকে সর্বপ্রথম নিবন্ধন করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভ্যাট আদায় করা হয়। যার যতটুকু বিক্রয় তার সেই বিক্রয়ের উপরই ভ্যাট আরোপ করা হয়। অথচ অনেকেই আছেন, যারা ভ্যাট প্রদানে নিরুৎসাহিত বোধ করেন। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আপনারা আমাদের অন্নদাতা। কাউকে হয়রানি করা আমাদের লক্ষ্য নয়। সকলে ভ্যাট প্রদানে উৎসাহী হবেন এমনটাই আমরা আশা করছি। তিনি ভ্যাট আদায়ে চেম্বারের সহায়তাও কামনা করেন।
মতবিনিময় সভাশেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক’জন ব্যবসায়ী জানান, ভ্যাট আদায়ের নামে আমাদের সাথে প্রহসন করা হচ্ছে। হয়রানির ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না। ব্যবসায়ী ক’জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বলা নাই কওয়া নাই, আগের থেকে কোনো ইনফরমেশন না দিয়েই নাকি হঠাৎ করে ভ্যাট কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে তারা গত ক’দিন আগে পুরাণবাজারের গাজী বস্ত্রালয়, বঙ্গশ্রীসহ কয়েকটি কাপড়ের দোকানের খাতাপত্র নিয়ে আসেন। এতে করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক লেনদেনসহ হিসেব নিকেশ করতে ভীষণ অসুবিধা হলেও তারা খাতাপত্র ফেরৎ দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। পুরাণবাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই দেনার দায়ে জর্জরিত। চরাঞ্চলের কাস্টমারের উপরই তাদের নির্ভর করতে হয়, বিশেষ করে হাতেগোণা ৪-৫টি কাপড়ের দোকান ছাড়া পুরাণবাজারের অধিকাংশ কাপড়ের দোকানই কোনো রকমে তাদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখেছে। এমনি পরিস্থিতিতে যদি তাদেরকে সেলস ট্যাক্স বা ভ্যাট প্রদানে বাধ্য করা হয়, তাহলে অনেক ব্যবসায়ীই ঝরে যাবে বলে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা নদী সিকিস্তি এসব ভাঙ্গন এলাকার ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সেলস ট্যাক্সের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান এবং এ সকল ছোট ছোট ব্যবসায়ী যাতে টিকে থাকতে পারেন এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।