প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আবারও কারসাজিতে বাড়ছে সয়াবিন তেলের দাম
একটু বিরতি নিয়ে ফের বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। মুদি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ তেলের সাপ্লাই কম। চাহিদা মতো অর্ডার মিলছে না। তাদের অভিযোগ, দুয়েকদিন পর দিচ্ছি বলে ডিলাররা তেল দিতে গড়িমসি করছে, একই সঙ্গে দামও বেশি নিচ্ছে।
|আরো খবর
রমজান মাস শুরুর পর থেকে গত এক সপ্তাহে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা।
ভোজ্যতেলের দাম কমাতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। এরপর নির্ধারণ করা হয় নতুন দর। তারপরও বাজারে বেশি দামে তেল বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৯ এপ্রিল) মুগদার মুদি ব্যবসায়ী আল-আমিনের সঙ্গে কথা হয় সয়াবিন তেলের দরদাম নিয়ে। এ মুদি ব্যবসায়ী জানান, সয়াবিন তেলের দামটা একটু বাড়তির দিকে। রোজার এক-দুই দিন আগে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করেছি ১৬৫ টাকা দরে। মাঝে ১৬০ টাকায় নেমেছিল। গত দুই-তিন দিন ধরে আবার দাম বেড়েছে। এখন আবার ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। দুই লিটার ৩২৮ টাকা ছিল, এখন ৩৩০ টাকা। আর পাঁচ লিটার বিক্রি করেছিলাম ৭৭০ টাকায়। এখন আবার ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা সয়াবিনের দাম। কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আজ ভালো মানের খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ১৬৫ টাকায়। এটা গত সপ্তাহে ১৫৬ থেকে ১৫৭ টাকা ছিল।
কেন দাম বাড়ল জানতে চাইলে এই মুদি ব্যবসায়ী জানান, এটা তো কোম্পানির লোক বলতে পারবে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলে, দাম আরও বাড়তে পারে, মাল সাপ্লাই কম। আমরা ১০টা বোতল অর্ডার দিলে ৫টা দিচ্ছে। বলে দুই একদিন পর দিচ্ছি। নানা কারণ দেখিয়ে তেল দিতে গড়িমসি করছে তারা।
মুগদা এলাকায় আরেক দোকান থেকে পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল কিনেছেন ইসমাইল নামের এক ভোক্তা। তিনি বলেন, রোজার একদিন আগে তেল কিনেছিলাম দুই লিটার ৩২৫ টাকা দিয়ে। আজ পাঁচ লিটার কিনলাম ৭৮০ টাকায়। দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত মাসে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে মাত্র ৫ শতাংশ বহাল রেখে আমদানি, পরিশোধন ও ভোক্তাপর্যায়ে সব ধরনের ভ্যাট তুলে নেয় সরকার। এতদিন ভোজ্যতেলের ওপর তিন স্তরে ৩৫ শতাংশ কর ধার্য ছিল।
শুল্ক কমানোর পর গত ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয় দোকানে যা তখন ৭৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
এদিকে সরকার দাম কমালেও ব্যবসায়ীরা কৌশলে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও এর প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর বাজার, রামপুরা ও মিরপুর ১ নাম্বার বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সরকারি এ সংস্থাটি।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ৯ এপ্রিল ঢাকার বাজারে খুচরা এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫৪ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার পামওয়েলের (লুজ) দাম ১৪৬ টাকা; যা আগের সপ্তাহে ছিল ১৪৩ টাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম বেড়েছে- এমন অজুহাতে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়াতে চান আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা। গত বুধবার (৬ এপ্রিল) ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারক ও মিল মালিকদের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকে এ দাবি করেন তারা। এ সময় মিল মালিকরা সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ের (বাড়ানো) অনুরোধ জানান। বৈঠকে সিটি, মেঘনা, এস আলম, বসুন্ধরা ও টি কে গ্রুপের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভোজ্যতেলের বাজার সমন্বয় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। দ্রুত সময়ে সমন্বয় না হলে বাজারে আবারও সমস্যা তৈরি হবে বলে জানান তারা।
তবে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের পর মে মাসে এ দাম সমন্বয় নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয় অধিদপ্তর। কিন্তু তারপরও বাজারে বাড়ছে তেলের দাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, মিলে দাম স্বাভাবিক থাকলেও পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়েছি। পাঁচ পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ যদি বেশি নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আর্থিক দণ্ডসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। এছাড়া সিন্ডিকেট করে কেউ যদি দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলা করা হবে। আমরা সব ব্যবসায়ীকে বলতে চাই, আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা করুন এবং সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে চলুন। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।