প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৪৮
টিআইবির ১৯তম দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা ও প্রদর্শনী উদ্বোধন
দেশের তরুণদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন বয়সী তরুণদের হাতে ও ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা কার্টুন এবং কমিক স্ট্রিপ প্রতিযোগিতার ফল ঘোষণা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসাথে ১৩দিনব্যাপী প্রদর্শনী ও ভার্চুয়াল গ্যালারিও উদ্বোধন করা হয়। ৯ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উপস্থিত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ারস্ কোরিন হেনচজ পিগনানি, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিইজ উডসট্রা, এফসিডিও-এর ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ডানকান ওভারফিল্ড, ইউএসএআইডির ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স অফিসের পরিচালক অ্যালেনি টেনসে, বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের পলিটিক্যাল, ট্রেড অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান লুভিসা হফম্যান, দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার বিচারক কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবিব এবং নিউ এজ পত্রিকার সিনিয়র কার্টুনিস্ট মেহেদি হক। টিআইবি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে শুধুমাত্র আইনের শাসন, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাই যথেষ্ট নয়, বরং জনগণকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে দুর্জয় তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ ও সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। আর কার্টুন সেই প্রতিবাদের অন্যতম অনুসঙ্গ।’ দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতার বিচারক ও নিউ এজ পত্রিকার সিনিয়র কার্টুনিস্ট মেহেদি হক গত প্রায় ২০ বছর ধরে কার্টুনিস্টদের অসাধারণ সুযোগ তৈরি করে দেওয়ায় টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান। অপর বিচারক ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবীব এ বছর প্রথমবারের মত কমিক স্ট্রিপ ও ডিজিটাল মেথড যুক্ত করায় প্রতিযোগিতার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এই ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনে টিআইবিকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের পলিটিক্যাল, ট্রেড অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান লুভিসা হফম্যান বলেন, ‘কার্টুন সব সমাজেই সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেসব গল্প সাধারণভাবে তুলে আনা যায় না, কার্টুন সেই সব গল্পও তুলে আনতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কার্টুন বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণরা ক্ষমতায়িত হয় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যে কাজ করার সুযোগ লাভ করে।’ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও উন্নয়ন বিষয়ে স্পষ্ট ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রশংসা করে ইউএসএআইডির ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স অফিসের পরিচালক অ্যালেনি টেনজি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রসবোধ অত্যন্ত চমৎকার। এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সেই বিষয়টি আবার প্রমাণিত হলো। পারস্পরিক বহুমুখী সহযোগিতার পাশাপাশি মার্কিন সরকার ও জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবসময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছে।’ এফসিডিও-এর ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ডানকান ওভারফিল্ড বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এই কার্টুন প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের তরুণদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানের বার্তা প্রদান করছে।’ বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিইজ উডসট্রা উপস্থিত তরুণদের দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে জেন-জি প্রজন্মকে বাংলাদেশের জন্যে কাজ করার আহ্বান জানান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কার্টুনের ব্যবহার উৎসাহিত করে সুইজারল্যান্ডের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ারস্ কোরিন হেনচজ পিগনানি বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ জরুরি। আর কার্টুনের রসবোধ যে কোনো বিষয়ের মতোই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’ ‘দুর্নীতি ও অনৈতিকতা' বিষয়ে আয়োজিত ১৯তম কার্টুন প্রতিযোগিতায় হাতে আঁকা ‘ক’ বিভাগে (১৩-১৮বছর) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শোয়াইব আহমেদ, নওগাঁর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজর মাহিন মেহজাবিন মোহর এবং রংপুর ক্যাডেট কলেজের আহনাফ তাহমিদ। ‘খ’ বিভাগে (১৯-২৫ বছর) প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী অরিন্দম কুন্ডু, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আসিফ মোহাম্মদ ইউসুফ এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)- এর শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জুনায়েদ। উভয় গ্রুপের বিজয়ীদের যথাক্রমে ৭৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় টিআইবি এ বছর প্রথমবারের মতো (১৫ থেকে ২৫ বছর) ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা কার্টুন ও কমিক স্ট্রিপ ক্যাটাগরি যুক্ত করে। ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা কার্টুন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মং সোনাই রাখাইন এবং কমিক স্ট্রিপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)- এর শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জুনায়েদ। এই দুই বিভাগে বিজয়ীদের ৭৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া সবগুলো ক্যাটাগরি থেকে মোট ৪২জন কার্টুনিস্টকে বিশেষ মনোনয়ন পুরস্কার দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, এ বছর হাতে আকাঁ, ডিজিটাল মাধ্যম ও কমিক স্ট্রিপ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ১৬০জন কার্টুনিস্টের সর্বমোট ২৪৭টি কার্টুন জমা পড়ে। এর মধ্যে হাতে আঁকা কার্টুনের দুটি বিভাগে ২১৩টি, ডিজিটাল বিভাগে ১২টি এবং কমিক স্ট্রিপ বিভাগে ২২টি কার্টুন জমা পড়ে। কার্টুন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫০জন কার্টুনিস্টের মোট ৬৩টি কার্টুন নিয়ে ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে, যা সবার জন্যে উন্মুক্ত। টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ের (মাইডাস সেন্টার, বাসা- ০৫, সড়ক-২৭) লেভেল ৫-এ ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রদর্শনী প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে। পাশাপাশি, ভার্চুয়াল গ্যালারিতেও (https://www.ti-bangladesh.org/cartoon-competition) এই প্রদর্শনী দেখা যাবে। এ বছর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের ২০ বছর পূর্তিতে 'নতুন বাংলাদেশ : দুর্জয় তারুণ্য দুর্নীতি রুখবেই' এই প্রতিপাদ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করছে টিআইবি। এর অংশ হিসেবে ৫ ডিসেম্বর বিগত ২৫ বছরে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিক কনক্লেভ আয়োজন, দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৪ প্রদান, গণমাধ্যমে কর্মরত বাছাইকৃত সংবাদকর্মীদের দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ফেলোশিপ প্রদান; গত ৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানবন্ধন আয়োজন ছাড়াও সারাদেশে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ইয়ুথ এনগেইজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস গ্রুপ), একটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি)-এর সদস্যসহ টিআইবি সদস্য ও সমমনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে দুর্নীতিবিরোধী রেলি, সমাবেশ, তথ্যমেলা, কুইজ প্রতিযোগিতা, কার্টুন প্রদর্শনীসহ নানাবিধ আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে।